সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের সিলেটের ওসমানীনগর অংশে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে এক ধাপ এগিয়ে এসেছে ওসমানী নগর থানা পুলিশ। সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিনের নিদের্শক্রমে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, অবৈধ যান চলাচল, স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে টিম ওসমানীনগর গ্রহণ করেছে বিভিন্ন উদ্যোগ।
বৃহস্পতিবার রাতে সাদিপুরে সড়ক দুর্ঘটনার পর পরই মহাসড়ক দখল করে রাখা নির্মাণসামগ্রী অপসারণে উদ্যোগী হয়েছে ওসমানীনগর থানার পুলিশ। উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে সড়ক থেকে নির্মাণসামগ্রী সরাতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেছেন ওসমানীনগর থানার ওসি। তার অনুরোধে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ব্রাহ্মণগ্রাম এলাকায় বাড়ি নির্মাণের জন্য মহাসড়কের পাশে রাখা পাথর অপসারণ করা হয়। গত শুক্রবার সকালে নাটকিলা এলাকা থেকে স্তুপকৃত বালি সরানো হয় । এছাড়া অন্যান্য এলাকায়ও মহাসড়কের পাশে থাকা ব্যক্তি মালিকানাধীন নির্মাণসামগ্রী অপসারণের জন্য ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ওসমানীনগর থানা পুলিশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে।
ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শ্যামল বণিকের নেতৃত্বে গত ১৬ আগস্ট সকালে ওসমানীনগর থানা এলাকাধীন সকল স্কুল, কলেজ ও মাদরাসাসমূহের শিক্ষকদের নিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা, নারী শিশু নির্যাতন প্রতিরোধসহ সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেন। একই দিন সন্ধায় গোয়ালাবাজার ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ওসমানীনগর থানা এলাকার গাড়ি চালকদের নিয়ে পৃথক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ওসমানীনগর অংশ যেন মৃত্যুকূপে পরিনত। কারোনা মাহামারির কারণে লকডাউন থাকায় দূর পাল্লার যান চলাচল বন্ধ থাকায় কিছুটা দুর্ঘটনা কমে আসলেও যান চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় ওসমানীনগরে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। মহাসড়কের ওসমানীনগরে অংশে বড় বড় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি। মাত্র ১৩ দিনের ব্যবধানে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ওসমানীনগর অংশে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটলেও বড় দুই দুর্ঘটনায় নারী ও শিশুসহ নিহত হয়েছেন ১২ জন। দুই পরিবার এক সঙ্গে ৯ জনকে হারিয়ে দুটি পরিবারই যেন নিঃস্ব। এছাড়া আরও তিনটি পরিবারও দিশেহারা।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে উপজেলার ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী যাত্রীবাহী মামুন পরিবহন বাস (ঢাকা মেট্রা-ব ১৪- ৯৮৪৮) ও শেরপুরগামী সিএনজি চালিত অটোরিকশা (মৌলভীবাজার -থ ১১-৩৬৯১) সিলেট ঢাকা মহাসড়কের গজিয়া গ্রিন বার্ড কিন্ডারগার্টেনের সামনে আসলে যাত্রীবাহী বাস সিএনজি চালিত অটোরিকশাকে চাপা দিলে একই পরিবারের ৪ জন সহ ৬ নিহত হয়েছেন। মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন আরও ২ জন। এর আগে গত ৩১ জুলাই সকালে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের উপজেলার বরায়া চাঁনপুর নামক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৫ জনসহ ৬ জন নিহত হন।
শেরপুর হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. এরশাদুল হক ভূইয়া বলেন, হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। দুর্ঘটনার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আঁকা বাকা রাস্তা ও সার্ভিস লেন না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটছে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া যানবাহনে অভারস্পিডের মামলা না দেওয়ায় চালাকরাও বেপড়োয়াভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন। আমরা তাদের সচেতন করতে কাজ করে যাচ্ছি।
জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ২৭ কিলোমিটার অংশ রয়েছে ওসমানীনগর উপজেলার মধ্যে। মহাসড়কের এ অংশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের বৃহৎ দায়িত্বে রয়েছে শেরপুর হাইওয়ে থানার পুলিশ। কিন্তু তাদের সঠিক তদারকির অভাবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মহাসড়কের পাশে ফেলে রাখা হয়েছে বালি-পাথর-ইটসহ বিভিন্ন প্রকার নির্মাণসামগ্রী, হাট-বাজার এলাকায় গড়ে উঠেছে ভাসমান দোকান। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে উপজেলার সর্বত্র মহাসড়কজুড়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা যায়।
ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল বণিক বলেন, ‘ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ওসমানীনগর অংশের হাট-বাজারসহ রাস্তার উভয়পাশে বালু, পাথরসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী রেখে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। মহাসড়কের দায়িত্ব হাইওয়ে পুলিশের ওপর ন্যাস্ত। তারপরও মানবিক কারণে ওসমানীনগর থানার পুলিশের পক্ষ থেকে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে গৃহিত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশ কমে যাবে বলে তিনি মনে করেন।